কিউ প্রজাতির আনারস চাষ করে স্বাবলম্বী দিলীপ দেববর্মা - Sabuj Tripura News

সবুজ ত্রিপুরা
০৮ অক্টোবর ২০২০ 
বৃহস্পতিবার 

তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধিঃ দিনমজুর তথা রাজমিস্ত্রি থেকে বিশাল ফলের বাগানের মালিক।আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন চাষী অর্থনৈতিকভাবে অনেক টাই অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে।বিশেষ করে শুরু থেকেই কিউ প্রজাতির আনারস চাষ করে নিজের ফলের বাগানের সমৃদ্ধি ঘটায় এই জুমচাষী দিনমজুর দিলীপ  দেববর্মা। একটা সময় ছিল দিনমজুরি বা রাজমিস্ত্রি করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তেলিয়ামুড়া মহকুমার মুঙ্গিয়াকামি ব্লকের অন্তর্গত বিলাই হাম অঞ্চলের  হত দরিদ্র দিলীপ দেববর্মার পরিবারটিকে। বিগত ৫ বছর আগে দিলীপ দেববর্মার মাথায় আসে যেহেতু সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আর নিজের বাড়ির পাশে বিশাল জমিও আছে নিজের যা  সরকার  পাঠ্টা হিসেবে দিয়েছিল সেই জমিকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করা যায় কিনা। 


তখন তেলিয়ামুড়া কৃষি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অশোক চৌধুরী। দিলীপ দেববর্মা তখন উনার সাথে যোগাযোগ করেন এবং আনারস বাগান করার পরিকল্পনা নেন। মহকুমা কৃষি দপ্তর দিলীপ দেববর্মার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। তখন দিলীপ দেববর্মা কে দেওয়া হয় কিউ প্রজাতির আনারসের চারা।শুরু হয় দিলীপ দেববর্মার নতুনভাবে গড়ে তোলা ফল বাগানের কাজ। ধীরে ধীরে বাগান বড় হতে থাকে। কৃষি দপ্তরও বিভিন্নভাবে দিলীপ  দেববর্মাকে সাহায্য করেন। ধীরে ধীরে দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে গেছে। আজ দিলীপ দেববর্মা আর্থ সামাজিক ভাবে উন্নতি ঘটিয়েছে। এখন শুধু আনারস বাগানই নয় পাশাপাশি লিচুবাগান কিছু পরিমাণ  উন্নত প্রজাতির আম গাছ পেঁপে গাছ সুপারি গাছ আর মোসাম্বির  গাছ লাগিয়ে বাগানটাকে আরো বৃহৎ আকার করে গড়ে তোলেন। 


আর দিলীপ  দেববর্মা কে সব দিক দিয়ে সাহায্য করছেন বর্তমান তেলিয়ামুড়া কৃষি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক সেন্টু আচার্য্য, এ ব্যাপারে বলতে গিয়ে কৃষি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক সেন্টু আচার্য্য বলেন এই দিলীপ দেববর্মার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নয়নের জন্য এবং এই বাগানকে আরো বড় করে তোলার জন্য ১ হেক্টর জমিতে সুপারি চারা আধা হেক্টর জমিতে মোসাম্বির চারা আধা হেক্টর জমিতে পেঁপে চারা সহ আরো কিছু ফল গাছের চারা দেওয়া হয়েছে দিলীপ দেববর্মাকে কৃষি দপ্তর থেকে।তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় তিনি আরো বলেন যেহেতু কিউ প্রজাতির আনারস চাষ লাভজনক তাই দিলীপ দেববর্মা কিউ প্রজাতির আনারসের উপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে আসাম থেকে আরো একটি উন্নত প্রজাতির আনারস চারা এনে বাগানে লাগিয়েছেন দিলিপ দেববর্মা। বর্তমানে  প্রায় দু লক্ষ টাকার উপর উপার্জন করে বাগান থেকে এই রাজমিস্ত্রি দিলীপ দেববর্মা। 


শুধু  তাই নয় এবছর মুঙ্গিয়াকামী ব্লক থেকে  এই দিলীপ দেববর্মা কে বেস্ট ফার্মার অ্যাওয়ার্ড ও ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে মহকুমা কৃষি দপ্তর থেকে। দিলীপ দেববর্মার বাগানের ইতিহাস শুনে প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল  ছুটে যান দিলীপ দেববর্মার বাগানে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন খোয়াই জেলার জেলা সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা সহ সভাপতি হরিশঙ্কর পাল, মুঙ্গিয়াকামি ব্লকের ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ দেববর্মা, তেলিয়ামুড়া মহকুমা কৃষি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক সেন্টু আচার্জী , কৃষি  অফিসার মৌসুমী দাস সহ অন্যান্যরা।  দিলীপ  দেববর্মার এই বৃহদাকার আনারস বাগান দেখে আপ্লুত প্রতিনিধিদলটি। সমস্ত বাগান ঘুরে দেখেন উনারা। দিলীপ  দেববর্মা জানান যে শুধু সিজনেই নয় সারাবছরই আমার বাগানে আনারস থাকে। আন সিজনেও ৭০-৮০ হাজার টাকার আনারস বিক্রি করে থাকি আমি। একেকটা আনারস ৪০ থেকে ৫০টাকায় বিক্রি হয়। আজ আমি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটাই অগ্রসর হতে পেরেছি এবং আমি খুব খুশি এবং ভালোই আছি। কৃষি দপ্তর সর্বতোভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছে।আরো বেশি করে ফলের চারা নিয়ে আমি আরো বড় বাগান করতে চাই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Close Menu