ধর্মনগর প্রতিনিধিঃ প্রায় ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খোঁজ মেলেনি পানিসাগরের দামছড়া থেকে অপহৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিটন নাথের। আর্থিক দৈন্যতা ও আতঙ্কের মধ্যে ৩ কন্যা ও ১ শিশু পুত্রকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন অপহৃত লিটন নাথের স্ত্রী শিপ্রা নাথ। প্রসঙ্গত গত ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে পানিসাগর মহকুমার দামছড়া থানাধীন জয়রাম পাড়া থেকে অপহৃত হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিটন নাথ। তার বাড়িতে স্ত্রী সহ ৩ নাবালিকা কন্যা ও ১ শিশুপুত্র রয়েছে। বন্দুকের নলের মুখে লিটন নাথকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল বলে জানা গেছে। এর পর থেকে এখন অব্দি গভীর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন লিটন নাথের স্ত্রী। পাশাপাশি বর্তমানে দেখা দিয়েছে তাদের পরিবারে প্রবল আর্থিক দৈন্যতা। কেননা লিটন নাথ এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন।যদিও অপহরনের দু'দিন পর শাসক দলের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চাল আলু পিয়াজ ও কিছু সবজি দেওয়া হয়েছিল।
এগুলো দিয়ে দু তিনদিন চলার পর প্রায় ১৫ দিন অবধি শিপ্রা নাথসহ তার নাবালক নাবালিকা সন্তানরা আধপেটা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। শিশুপুত্র টির জন্য দুধ কিনে দেওয়ার সম্বল টুকু নেই। ঘটনার কিছুদিন পর স্থানীয় বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস দামছড়ার জয়রাম পাড়াতে গিয়ে লিটন নাথের স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বামীকে ফিরিয়ে দেবার।কিন্তু প্রতিদিন পুলিশ শুধু তল্লাশির নামে জিজ্ঞাসাবাদ করেই চলেছেন।কিন্তু বার বার উদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন পুলিশ। গত ১৮ দিনে পুলিশের চিরুনি তল্লাশিতে রাজ্য এবং বহি রাজ্য থেকে লিটন অপহরণ কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে মোট ৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। প্রথমেই গ্রেফতার করেছিলেন খেদাছড়া থানা এলাকার পন্ডিরাম রিয়াং পাড়ার বাসিন্দা কোহেলি রিয়াং নামে এক যুবককে।তারপর পুলিশ গ্রেপ্তার করে আসামের হাইলাকান্দি জেলা থেকে জিয়া উদ্দিন নামে এক যুবককে।
এরপর সর্বশেষ লিটন অপহরণের দায়ে মিজোরাম থেকে আগত সন্দেহভাজন পেটোয়া রিয়াং ও গঙ্গারাম রিয়াং নামের দুই যুবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে পুলিশ অবশ্য এখনো ক্রমাগত দাবি করে চলেছে তারা লিটন নাথকে উদ্ধার করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তল্লাশি জারি রেখেছে।গোটা উত্তর জেলায় তল্লাশি অভিযান এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে অভিযান চলছে প্রতিনিয়ত।পুলিশের অনুমান ত্রিপুরাতে লিটন নাথ নেই। তাকে দুষ্কৃতীরা মিজোরাম অথবা আসামের কোন গোপন স্থানে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে একাধিকবার রাজ্যের ডিএসপি হেডকোয়াটার ডি.ডারলং এর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী দের নিয়ে বরাকের বিস্তীর্ণ এলাকায় অবস্থান করেছেন। কিন্তু তাতেও কোন সন্ধান মিলেনি অপহৃত লিটন নাথের। বলতে গেলে বর্তমানে ঘটনার ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঘুরছেন। তার পরেও পুলিশ আশাবাদী লিটন নাথকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হবে।এদিকে গত ১৩ ই ডিসেম্বর রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব পানিসাগর এর গুলি কাণ্ডে নিহত শ্রীকান্ত দাসের বাড়িতে ছুটে যান। ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন শ্রীকান্ত দাস এর পরিবারের হাতে।একি দিনে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন নিহত ফায়ারম্যান বিশ্বজিৎ দেববর্মার বাড়িতে।
সেখানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিহত বিশ্বজিতের স্ত্রীর হাতে চাকরির অফার এবং ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। একই দিনে অর্থাৎ রবিবার অপহৃত লিটন নাথের পরিবারের সাথে দেখা করতে আসবেন বলে দামছড়া এলাকাবাসী আশায় পথ চেয়েছিলেন। আশা ছিল লিটন নাথের স্ত্রী শিপ্রা নাথের। অন্তত মুখ্যমন্ত্রী এসে তার অবুঝ সন্তানদের সান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারের বর্তমান দৈন অবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। মুখ্যমন্ত্রী এলে লিটন নাথকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। বাড়িতে ফিরে আসবে লিটন নাথ।পরিবারের এই দুঃসময়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়তো পাশে দাঁড়াবেন এই কথাগুলো চিন্তা করে রবিবার স্ত্রী শিপ্রা নাথ মুখ্যমন্ত্রীর পথ চেয়ে সারাদিন অপেক্ষা করছিলেন। সাথে সাথে রবিবার সকাল থেকে লিটন নাথের বাড়িতে এলাকার লোকজন এসে ভিড় করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির আশায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী না এলে এলাকাবাসী সকলে আবার বাড়ি ফিরে যান।সূত্রে জানা গেছে স্বামীর মুক্তির দাবিতে স্ত্রী শিপ্রা নাথ নাবালিকা কন্যা ও শিশু পুত্রকে নিয়ে আগরতলায় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছেন।
0 মন্তব্যসমূহ