সবুজ ত্রিপুরা, চুড়াইবাড়ি প্রতিনিধি,
২৩ অক্টোবর : আর হাতে কটা দিন, তারপর আলোর উৎসব দীপাবলি। শহর থেকে
গ্রাম আর গ্রাম থেকে কুমোরপাড়া চারিদিকে চরম ব্যস্ততা। ক্লাব উদ্যোক্তা থেকে শুরু
করে প্যান্ডেলের শিল্পীরা, এবং কুমোরপাড়ায় মৃৎশিল্পীরা দিনরাত একাকার করে কাজ করে
চলেছেন।
কালীপুজো মানেই আলোর উৎসব। চারিদিকে রকমারী চাইনিজ লাইটিং
এ সেজে উঠবে পুজো মণ্ডপ থেকে শুরু করে গৃহস্থের ঘর। সেই সময় উত্তর জেলার বাগবাসা বিধানসভা
কেন্দ্রের দক্ষিণ হুরুয়া গ্রামের কুমোরপাড়ায় মৃৎ শিল্পীদের মধ্যে মাটির প্রদীপ তৈরিতে
চরম ব্যস্ততা পরিলক্ষিত হলো। দক্ষিণ হুরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪ নং ওয়ার্ডের কুমোর
পাড়ায় বিধুভুষণ রুদ্রপাল, উনার স্ত্রী দিপালী রুদ্র পাল ও রঞ্জিত রুদ্রপাল সহ প্রায়
৫/৬ জন মৃৎশিল্পী মাটির প্রদীপ সহ মাটির অন্যান্য সামগ্রী বিগত কয়েক বছর ধরে তৈরি করে
আসছেন। এ বছরও আলোর উৎসব দীপাবলিতে অসংখ্য মাটির প্রদীপ তৈরি করছেন। তবে দুঃখের বিষয়,
আধুনিক সমাজ নানান চাইনিজ বৈদ্যুতিক লাইট পেয়ে এসকল মাটির প্রদীপ ভুলে যেতে বসেছে।
এমনকি উনার আশাবাদী যে, আধুনিক যুগের মানুষ এসকল চাইনিজ প্লাস্টিক লাইটিং বর্জন করে
মাটির প্রদীপের মূল্যায়ন করবেন।
দীর্ঘদিন থেকে এই মৃৎশিল্পীরা মাটির বিভিন্ন সামগ্রী
তৈরি করলেও আজ পর্যন্ত উনারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা বা মাটির বিভিন্ন সামগ্রীর ন্যায্য মূল্য। অতি দুঃখ কষ্টের মধ্যেই এঁরা সংসার
প্রতিপালন করে আসছেন এই শিল্পের উপর নির্ভর করে। দক্ষিণ হুরুয়া গ্রামের বাসিন্দা বিধুভুষণ
রুদ্রপাল ও উনার স্ত্রী দিপালী রুদ্র পাল জানান, উনারা প্রায় ১৫/১৬ বছর থেকে এই মৃৎশিল্পের
কাজে নিয়োজিত। প্রতিমাসেই উনারা মাটির প্রদীপ থালা পাতিল সহ অন্যান্য সামগ্রী পাইকারি
মূল্যে বিক্রি করে বেশ ভালোই আয় করে আসছেন। ধর্মনগর, কদমতলা, চুড়াইবাড়ি, পানিসাগর,
তিলথৈ সহ অন্যান্য জায়গা থেকে পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে মাটির বিভিন্ন সামগ্রী কিনে
নিয়ে যায়। তবে উনাদের আর্থিক অভাব-অনটনের ধরুন মাটির সামগ্রীর তেমন যোগান দিতে পারেন
না। মাটি থেকে শুরু করে অন্যান্য সামগ্রী এমনকি জ্বালানি কাঠও ক্রয় করতে হয় সুতরাং
লাভের হারটা অনেকটাই কমে যায়। তাঁদের কথায়, বর্তমান যুগে প্লাস্টিকের যে বাড়বাড়ন্ত,
তাতে জনগণের তীব্র ক্ষতিসাধন হচ্ছে। তাই মানুষের প্রতি উনাদের একটাই নিবেদন, মানুষ
যেন প্লাস্টিক থেকে দূরে থাকে এবং প্লাস্টিক বর্জন করে মাটির তৈরি সামগ্রী ব্যবহার
করেন। পাশাপাশি তাঁরা আরো বলেন, যদি সরকার উনাদেরকে সাহায্য করে, তাহলে উনারা তাঁদের
মৃৎশিল্পের ব্যবসাটা আরেকটু বাড়িয়ে আরো মাটির বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে
তুলতে পারতেন এবং উনাদের পরিবারটাও সচল হত।
অপরদিকে একই গ্রামের মৃত শিল্পী রঞ্জিত রুদ্র পাল জানান,
উনি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত এই মৃৎশিল্পের কাজ করছেন। উনার সম্পূর্ণ সংসারটি এর উপরই প্রতিপালিত
হচ্ছে। তবে এবছর মাটির প্রদীপের চাহিদা কিছুটা রয়েছে। সামনে আলোর উৎসব দীপাবলি, তাই
উনারা প্রচুর পরিমাণে মাটির প্রদীপ তৈরি করে আসছেন। উনি আশাবাদী যে সবকটি মাটির প্রদীপ
বিক্রি হয়ে যাবে। যদিও অনেক আর্থিক প্রতিকূলতা উনাদের রয়েছে তবুও এই আলোর উৎসব দীপাবলিতে
মাটির প্রদীপ বিক্রি করে সংসার ও ছেলেমেয়েদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারবেন। পাশাপাশি
রঞ্জিত রুদ্র পাল একটু সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন জানান।
বর্তমান যুগে বিভিন্ন চাইনিজ লাইটিংসহ আধুনিক সামগ্রী
বাজার গ্রাস করায় মৃৎশিল্পীরা সামান্যটুকু পুঁজির মধ্য দিয়ে নানা মাটির সামগ্রী তৈরি
করে সংসার প্রতিপালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। যদিও নবপ্রজন্ম মৃৎশিল্পী পেশা থেকে অনেকটা
দূরে সরে গিয়েছে। তবুও দক্ষিণ-হুরুয়া গ্রামের কুমোর পাড়ার ৫/৬ মৃৎশিল্পীরা তাঁদের
শিল্পটাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। তবে এবছর উত্তর জেলার বিভিন্ন বাজারে মাটির প্রদীপের
প্রচুর পরিমাণে যোগান থাকবে। আর প্রতিটি কালী পুজো মণ্ডপ থেকে শুরু করে গৃহস্থের ঘরেও
মাটির প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন : শারদোৎসব প্রস্তুতি উত্তর ত্রিপুরা জেলায়
0 মন্তব্যসমূহ