শারদোৎসব প্রস্তুতি উত্তর ত্রিপুরা জেলায়


সবুজ ত্রিপুরা, চুড়াইবাড়ি প্রতিনিধি, ২৪ সেপ্টেম্বর : হাতে গোনা আর কটা দিন তারপর বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। পুজো মানে আনন্দ উল্লাস,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা ও রকমারি খাবার খাওয়া। একটি বছরের অপেক্ষায় বসে থাকা কখন শারদীয় দুর্গোৎসব আসবে আর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনরা দলবেঁধে মণ্ডপে মণ্ডপে মায়ের দর্শন করতে যাওয়া যাবে। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই দেবী মায়ের আরাধনায় সামিল হন পূজো উদ্যোক্তারা। চারিদিকে শিউলি ফুলের গন্ধ। কুমোর পাড়া থেকে শুরু করে মালা শিল্পী ঢাকি ও পুজোমণ্ডপে শিল্পীদের চরম ব্যস্ততা। দোকান গুলিতে কেনাকাটার ধুম। এক কথায় যেন চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ।
কুমোরপাড়ায় মূর্তি গড়ার কাজ চলছে। ছবি সৌজন্যে : গুগল।
গোটা রাজ্যের সাথে উত্তর জেলার ধর্মনগর মহকুমায় বড় বাজেটের পূজো করছেন ক্লাব কমিটি ও সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির পূজো উদ্যোক্তারা। ধর্মনগর শহরে ছোট-বড় প্রায় ২৮ টি দুর্গা পুজো হয়। তারমধ্যে ৮ থেকে ১০ টি বড় বাজেটের পূজো রয়েছে। বিভিন্ন আকর্ষণীয় থিমের উপর রয়েছে পূজো প্যান্ডেল। রয়েছে কাল্পনিক আদলে তৈরি মন্দিরও। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় বাজেটের মধ্যে আপনজন ক্লাব, পদ্মপুর ক্লাব, এগিয়ে চলো ক্লাব, নয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, নবরাগ সঙ্ঘ, মধ্যশহর সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি সহ প্রায় ৮ থেকে ১০ টি বড় বাজেটের পুজো রয়েছে। প্রত্যেক ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা কমিটি দর্শনার্থীদের কিছু নতুনত্ব দেওয়ার প্রয়াস করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। অধিকাংশ বড় বাজেটের পুজো প্যান্ডেল গুলি থিম ও কাল্পনিক মন্দিরে তৈরি করছেন। যেমন পদ্মপুর ক্লাবে এবারের থিম "হৃদয়ে রবি ঠাকুর"। এবারে পদ্মপুর ক্লাবের বাজেট ১১ লক্ষ টাকা। এদিকে চন্দ্রপুরের আপনজন ক্লাব দর্শনার্থীদের মন কাড়তে সম্পূর্ণ ইনস্টলেশনের মাধ্যমে থিমের পুজোর আয়োজন করেছে। এবারে আপনজন ক্লাবের থিম "মা" এর উপর। মা ছেলেকে শিশু থেকে বড় করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ইনস্টলেশনের মাধ্যমে দেখানো হবে বলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষরা জানান। অপরদিকে নয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি এবারে ৩৮ বছরে পা দিল। নয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির এবারের বাজেট ১১ লক্ষ টাকা। সব কটি বড় বাজেটের পুজোয় উঁচু উঁচু প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। সাথে থাকছে রকমারি আলোকসজ্জা।

ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও সার্বজনীন পূজো কমিটি কর্তৃপক্ষ জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার আর্থিক কিছুটা মান্দা রয়েছে।প্যান্ডেল তৈরির সামগ্রীর মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সে হারে পুজো কমিটির বাজেটের টাকা সংগ্রহ হচ্ছে না। তবে ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা কমিটির কর্তৃপক্ষরা আশাবাদী স্বল্প বাজেটে উনারা রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করতে পারবেন। এমনকি দর্শনার্থীদের মন কাড়তে পারবেন। ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা কমিটি কর্তৃপক্ষ জানান, দুর্গাপুজোর পাশাপাশি উনারা নানা সামাজিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে ফল মিষ্টি বিতরণ সহ রক্তদান ইত্যাদি সামাজিক কর্মসূচি করে থাকবেন পূজোর ৩ দিন। এছাড়া প্রতিটি প্যান্ডেল নির্মাণে অধিকাংশ শিল্পীরা নবদ্বীপ বৃন্দাবনের। তবে অনেক প্যান্ডেলে রাজ্যে দক্ষ প্যান্ডেল শিল্পীরাও উচু উচু প্যান্ডেল নির্মাণ করছেন। দিনরাত একাকার করে প্যান্ডেলের কাজ করে যাচ্ছেন রাজ্যের ও বহিঃরাজ্যের শিল্পীরা। দুর্গাপূজা কমিটি থেকে শুরু করে প্যান্ডেলের শিল্পীরা আশাবাদী উনারা চতুর্থীর আগেই প্যান্ডেলের কাজ শেষ করতে পারবেন। এক কথায় দর্শনার্থীদেরমন কাড়তে প্রতিটি ক্লাব ও পুজো কমিটির যেন এক প্রতিযোগিতা।
উল্লেখযোগ্য যে, রাজ্যে আগরতলা শহরের পর বাণিজ্য শহর ধর্মনগরের দুর্গাপূজো রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল কর থাকে। রাজ্যের ও বহিঃরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ধর্মনগর শহরের উচু উচু প্যান্ডেল ও দুর্গা প্রতিমা দর্শন করতে ছুটে আসেন। পঞ্চমী থেকেই দেবী মায়ের দর্শনে প্রতিটি ক্লাব ও সার্বজনীন পূজা প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লেগে যায়, যা চলবে দশমী পর্যন্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Close Menu