ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিশিকুটুম্ব দলের হানা ও তাণ্ডবলীলা : অলঙ্কার লুট, কালীমূর্তি নিগ্রহ
সবুজ ত্রিপুরা, বিশেষ প্রতিনিধি, ১৪ সেপ্টেম্বর : উত্তর জেলায় বিগত পনেরো দিনের মাথায় তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে
হানা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ সোনারূপার অলঙ্কার ও নগদ অর্থ লুটপাট করেছে চোরের দল। প্রথমে
কদমতলা সার্বজনীন কালী বাড়িতে হানা দেয় চোরের দল। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মধ্য
চুরাইবাড়িতে ফের আবারো কালিবাড়িতে হানা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কারসহ অর্থ নিয়ে পালিয়ে
যায়। কিন্তু পুলিশ এর কোনও কূল কিনারা করতে না পারায় এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ
করছেন। তারই জেরে আজ সকাল ৮ টা থেকে স্থানীয় জনগণ চুড়াইবাড়ি-কদমতলার প্রধান সড়কটি
অবরোধ করে বসেন।
![]() |
চুরাইবাড়ি মাতা বিশ্বেশ্বরী সেবাশ্রমে চোরেদের তাণ্ডবলীলা। ছবি : কিশোররঞ্জন হোর। |
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চুড়াইবাড়ি থানার পুলিশ ছুটে আসলেও বেগতিক
অবস্থার সামাল দিতে পারেনি। ছুটে আসেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শ্রী রাজিব সূত্রধর, জেলার
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রী ফেন্সিং ডার্লং সহ মহকুমা শাসক শ্রী মানিক চক্রবর্তী, উত্তর জেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার তথা ঊনকোটি জেলার পুলিশ সুপার
লাকি চৌহান প্রমুখ। তদন্তে
নামানো হয় ডগ স্কোয়াডকেও। এলাকাবাসী দাবি করেন চোরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার না করলে
পথ অবরোধ মুক্ত হবে না। টানা
৬ ঘণ্টা অবরোধের পর সন্দেহভাজন ৪ যুবককে আটক করে পুলিশ। তারপর পুলিশ সুপার লাকি চৌহান
প্রতিবাদকারীদের আশ্বস্ত করলে পথ অবরোধ মুক্ত হয়।
ঘটনা বিবরণে প্রকাশ, উত্তর জেলার
চুড়াইবাড়ি থানাধীন চুরাইবাড়ি মাতা বিশ্বেশ্বরী সেবাশ্রমে গতকাল গভীর রাতে হাত সাফাই
করে চোরের দল। মন্দিরে প্রবেশ করে মূল ফটকের তালা ভেঙ্গে ভেতরে
প্রবেশ করে মন্দিরের ভেতরে কালীমূর্তির গলা, হাত-পা ও কোমরে থাকা বিপুল পরিমাণ রুপা
ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। আশ্রমের সেবিকা জানান, কালী মায়ের দুটি গলার চেন, কানের
দুল, দুইজোড়া নূপুর, কোমড়ের বিছে, মঙ্গলসূত্র, নাকের নথ - সব মিলিয়ে মোট ১০ ভরি সোনা
এবং ৪০ থেকে ৫০ ভরি রোপা নিয়ে চম্পট দেয় চোরের দল। এমনকি, মায়ের মূর্তির ৩তি হাতও ভেঙ্গে দেয়। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে দুটি
ধারালো দা এবং তালা ভাঙ্গার একটি যন্ত্র উদ্ধার করে। তবে পুলিশ আধিকারিক ও মহকুমাশাসকের
আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ জনগণ আশ্বস্ত না হওয়াতে কৈলাশহর থেকে ছুটে আসেন ঊনকোটি জেলার এসপি
তথা উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত এসপি লাকি চৌহান। এসপি শ্রী লাকি চৌহান ঘটনাস্থলে এসে সরজমিন
প্রত্যক্ষ করেন। তারপর গ্রামবাসী ও মন্দির কর্তৃপক্ষ চুরাইবারি থানায় লিখিতভাবে অভিযোগও
জানান।
![]() |
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ। ছবি : কিশোররঞ্জন হোর। |
শ্রী চৌহান স্থানীয়
মন্দির কমিটি ও উত্তেজিত গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন যে, এই ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত
করে দেখছে পুলিশ। তাছাড়া চুরাইবারি সহ চুরাইবারি স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন
চার যুবককে আটক করেছে চুরাইবাড়ি থানার পুলিশ। জানা গেছে সন্দেহভাজন ৪ যুবক হল - (১) আকবর আলী(২৯), পিতা আকদ্দস আল্ বাড়ি উত্তর
ফুলবাড়ী ৫ নং ওয়ার্ডে, (২) আলাস উদ্দিন ওরফে আলমাস (৩৩), পিতা আব্দুল রকিব
শনিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪ নং ওয়ার্ডে, (৩) জামাল উদ্দিন(৩৭), পিতা নরিজ
আল্ বাড়ি চুড়াইবাড়ি ৬ নং ওয়ার্ডে এবং অপর যুবক মইনুল হক(৩২), পিতা আব্দুল রহি্ বাড়ি
চুড়াইবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫ নং ওয়ার্ডে। অবশেষে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পর এসপি
মহোদয়ার আশ্বাস পেয়ে ও ৪ সন্দেহভাজন যুবক আটক হওয়াতে স্থানীয় জনগণ পথ অবরোধ মুক্ত
করেন। তবে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা ব্যস্ততম সড়ক কদমতলি চুড়াইবাড়ি সড়কটি অবরোধ থাকায় তীব্র
যানজট যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অপরদিকে স্থানীয়দের দাবি চুড়াইবাড়ি থানার পুলিশ
দীর্ঘদিন থেকে খামখেয়ালিপনা টহলদারি করছে।
পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ ও মাথা
বিশ্বেশ্বরী সেবাশ্রমের সেবিকা জানান, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চুরি কান্ড সংঘঠিত
হয়েছে কিন্তু এভাবে ঠাকুরের মূর্তি বিগ্রহে ভাঙচুর করেনি। শুভবুদ্ধি
সম্পন্ন মহলের ধারণা যে, এইসব ঘটনার পেছনে একটি দুষ্ট চক্র পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করার প্রয়াস
করছে। ধৃত ৪ যুবককে চুড়াইবাড়ি
থানার পুলিশ সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই ঘটনার
খবর পেয়ে হিন্দু যুবসেনার নেতৃত্বরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মন্দিরে
চুরি ও মূর্তি ভাংচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি এসপি লাকি চৌহানের সাথে
দেখা করে দোষীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
কোন মন্তব্য নেই