সবুজ ত্রিপুরা
১৩ জানুয়ারি
শুক্রবার
তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধিঃ ঢেঁকি ছাঁটা চালের আটার পিঠা, রুটি ছাড়া ঠিক জমে না পৌষ-সংক্রান্তি। কিন্তু ইদানীং ঢেঁকির দেখা পাওয়াই দুষ্কর, আর ঢেঁকি ছাঁটা চাল, আটা তো রীতিমতো সোনার হরিণ!
শহুরে হাওয়া আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকি।এখন গ্রামের দশটি বাড়ি ঘুরেও একটি ঢেঁকির সন্ধান পাওয়া বড়ো কঠিন। ঢেঁকির পরিবর্তে এখন যন্ত্রই ব্যাবহৃত হচ্ছে বেশি। এক সময় সম্পূর্ণ ঢেঁকিনির্ভর ছিল পৌষ-সংক্রান্তি। আবহমান গ্রাম-বাংলার লোকজ কৃষ্টি আর সংস্কৃতির অন্যতম আত্মপরিচয় দানকারী বস্তু ছিল এটি।‘ঢুমম...’ ‘ঢুমম...’ শব্দ আর জানান দেয় না পৌষ সংক্রান্তির পিঠা তৈরির তৎপরতা। পড়ন্ত বিকেলে গ্রামের পথে পথে হেঁটে ঢেঁকি বাড়ি খুঁজে পেতে
হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন
খানিকটা বেগ পেতে হয় বর্তমানে।তেলিয়ামুড়াড়া শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার গ্রামীণ পথ ধরে মহারানীপুর কপালীটিলা এলাকা। সেখানে পৌঁছে প্রত্যক্ষ করা গেল প্রায় ৫০ উর্ধ্বো এক মহিলা মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ঢেঁকির মাধ্যমে চাল, মাশের ডালের গুরা করতে ব্যাস্ত। ঢেঁকি তখন আপন ছন্দে নৃত্যরত! গ্রামের এমন একটি দৃশ্য বহুদিন দেখা হয়নি!দু’জন নারী ঢেঁকির পাশে সমান দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন। দু’জনেই দু’পায়ের চাপে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট তাল, লয়ে। বিপরীত দিকে অপর একজন নারী ঢেঁকির মাথায় বসে চাল গুলোকে বারবার নাড়িয়ে দিচ্ছেন। এক মহিলা বলেন,,, সংক্রান্তির পিঠা তৈরির জন্য আমরা ঢেঁকিতে আতপ চাল কুটাই। প্রথমে তিন-চার ঘণ্টা চাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর চালনিতে রাখা হয়। জল চাল থেকে ঝরানোর জন্য। জল পড়ে গেলে তারপর ঢেঁকিতে কুটানো হয়। চাল কুটানো'র সময় সীমা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢেঁকিতে তিন কেজি চাল কুটাতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। তিনি জানান, গ্রামবাংলা থেকে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তি পথে। তবে
এ অঞ্চলের কয়েকটি বাড়িতে এখনো প্রাচীন কালের এ নিদর্শনটি বেঁচে রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ঢেঁকির ব্যাবহার কিংবা ঢেঁকি কি তা চাক্ষুষ না দেখা গেলেও ছবি কিংবা ভিডিওতে দেখা মিলবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে। বলাবাহুল্য পুরানো সংস্কৃতি গ্রামগঞ্জের থেকে যে সংরক্ষণের অভাবে এবং অত্যাধুনিক মেশিনের যুগে বিলুপ্তির পথে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
0 মন্তব্যসমূহ