সবুজ ত্রিপুরা, চুড়াইবাড়ি প্রতিনিধি,
২৯ জুন : টানা
৬ ঘন্টার প্রবল বৃষ্টিপাতে জলমগ্ন অসম-ত্রিপুরা সীমান্তের কুর্তি এলাকা। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ পরিবার জলবন্দি। ১০ টি
ছোট ছড়া এবং ৩ টি নদীর জল ঢুকে জলমগ্ন বিস্তীর্ণ কুর্তি এলাকা। এখন
পর্যন্ত ত্রাণ অর্থাৎ খাদ্য সামগ্রী ও পানীয় জল সরবরাহ করা হয়নি। এক আতঙ্কময় পরিবেশ গোটা এলাকা জুড়ে।
গতকাল দুপুর বেলার টানা ৬ ঘন্টা প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে
উত্তর জেলার ত্রিপুরা আসাম সীমান্তের কুর্তি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মিজোরামের জল আসামের বুক চিরে লঙ্গাই ও সিংলা নদী বেয়ে কুর্তি
এলাকায় প্রবেশ করে। মোট ১০ টি ছড়া ও তিনটি নদীর জল কুর্তি
এলাকা জলমগ্ন করে ফেলে। কুর্তি নদী, থাল নদী ও কয়লা নদীর জল ঢুকে প্লাবিত করে
বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ পরিবার জল বন্দি অবস্থায়
রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের জুরি নদীর জল কুর্তি এলাকায় প্রবেশ
করার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে কিছুটা জল বৃদ্ধি হলেও পুনরায়
বৃষ্টি হলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে কুর্তি এলাকায়। তবে
এখন পর্যন্ত জলবন্দি পরিবারগুলোকে কোন ধরনের ত্রাণ ও পানীয় জল সরবরাহ করা হয়নি। জল বন্দি থাকা পরিবারের লোকজনরা নিজেদের তৈরী ছোট নৌকা অথবা ভাড়া
দিয়ে ছোট ছোট নৌকায় যাতায়াত করছেন। ছোট ছোট স্কুল ছাত্র
ছাত্রীরা নৌকা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত এমনকি সাধারণ জনগণ রাজারহাট থেকে শুরু করে সব
কাজ করছেন। এখন একমাত্র ভরসাই ছোট নৌকা।
যদিও এই এলাকাটি বন্যা কবলিত অঞ্চল কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সরকারের তরফ
থেকে কোন ধরনের বোট অথবা নৌকা দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে কুর্তির
মানিক নগর এলাকা সম্পূর্ণরূপে জলমগ্ন। কুর্তি জলাধার বিল রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় জলাধার বলে পরিচিত। পূর্বের
দীর্ঘ শাসনের বাম সরকার যেমন এই বন্যার সমস্যা নিয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি তেমনি
এখনো কুর্তি এলাকার জনগণের একই সমস্যা চিরাচরিতভাবে রয়ে গেল। বিশেষ করে ৫৪ নং বিধানসভা
কেন্দ্রের বাম বিধায়ক ইসলাম উদ্দিনের বাড়ি কুর্তি এলাকায় থাকা সত্ত্বেও এই বন্যার
সমস্যা নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এমনকি বন্যার জলে
প্লাবিত হয়ে মানুষ দিশেহারা কিন্তু বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন কোনো খোঁজখবর নেননি এমনটা
সাধারণ জনগণের অভিযোগ। পাশাপাশি গৃহপালিত পশু গরু ছাগল হাঁস
মোরগ নিয়েও চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ।
যদিও ৪/৫ দিন যাবত বন্যার কবলে কুর্তি এলাকা তবে গতকালের
প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কুর্তির মানিকনগর অঞ্চলটি। সরকারের
নিকট কুর্তি এলাকার মানিক নগরের জনগণের একটাই দাবি উনাদের রাস্তাটা যেন আরো উঁচু করিয়ে
তৈরি করে দেয় সরকার। যাতে করে বন্যা হলে ঘর থেকে গৃহ পালিত
পশু সহ নিজের ছেলে মেয়ে ও নিজেকে নিয়ে বের হতে পারেন। সাথে বিশুদ্ধ
পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত যেন করে দেয় সরকার। তাছাড়া প্রতিবছর
৫ থেকে ৭ বার এরকম ভয়াবহ বন্যা কুর্তি এলাকায় হয়ে থাকে সেই বন্যা থেকে মুক্তির কোন
পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাদেরকে যেন মুক্তি দেয় সরকার। জন্ম লগ্ন
থেকেই কুর্তি এলাকার জনগণ এ বন্যায় জর্জরিত তাই উনারা এখন মুক্তি চান।
স্থানীয় জনগণের আরও অভিযোগ ত্রিপুরা বাংলাদেশ সীমান্তের
তারকপুর এলাকায় কিছু কতিপয় ব্যক্তি থাল নদীটি ভরাট করে ছোট করে ফেলেছে। পাশাপাশি দুয়েকটি বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, সেই কারণে জল নিষ্কাশন
হচ্ছে না আর তার খেসারত পোহাতে হচ্ছে কুর্তির মানিক নগরবাসীকে। স্থানীয়
জনগণের দাবি সংশ্লিষ্ট জল সম্পদ দপ্তর ও রাজ্য সরকার যেন তাদের সমস্যা দূরীকরণ করেন। তবে রাজ্য সরকার যদি কুর্তি বিলে একটি বড় জলাশয়ের ব্যবস্থা করে
তাহলে যেমনটা পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করবে তেমনি কুর্তি এলাকাও বন্যার
হাত থেকে রক্ষা পাবে।
0 মন্তব্যসমূহ