ব্রজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় : চরম অবহেলা ও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত

বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বল্পতা ও অবহেলা, ছাত্রছাত্রীদের ডেস্কের অভাব, ৪ বছর যাবৎ স্টাইফেন বঞ্চনা, মিড ডে মিলের এরূপ নানা অভিযোগ ও নানা সমস্যায় জর্জরিত ব্রজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সবুজ ত্রিপুরা, চুরাইবাড়ি প্রতিনিধি, ২০ সেপ্টেম্বর :

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

উত্তর জেলার অতি পুরনো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়গুলোর মধ্য একটি হল ব্রজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ৭০৩ জন, যার মধ্যে ৩৫৩ জন ছাত্র এবং ৩৫০ জন ছাত্রী। কিন্তু শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। এই ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ ও সমস্যার অন্ত নেই। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে উঁচুক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্কুলে শিক্ষকরা আসলেও সঠিক সময় ক্লাসে যান না। বিশেষ করে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা জানায় যে, রাত পোহালেই তাদের ইংরেজি পরীক্ষা। কিন্তু তাদের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অমরেন্দ্র কুমার মহন্ত অধিকাংশ সময় স্কুল কামাই করেন। শুধু তাই নয়, স্কুলে এসেও স্টাফরুম ও ক্যান্টিনেই তিনি সমস্ত সময়টা কাটিয়ে দেন। কোন ধরনের ক্লাস নেন না ছাত্র-ছাত্রীদের। এমন অবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ। এমনকি বজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বড়জোর চতুর্থ-পঞ্চম পিরিয়ড হয় থাকে, ষষ্ঠ পিরিয়ড আজকে পর্যন্ত হয়নি বলে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ।

এভাবেই দিনের পর দিন পড়াশুনা করছে ব্রজেন্দ্রনগর বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ছবি : কিশোররঞ্জন হোর। 
ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত কিলিকদারের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছে। প্রধান শিক্ষক মহোদয় বেলা পৌনে বারোটার আগে স্কুলে পৌঁছেননা। ছাত্র-ছাত্রীদের আরও অভিযোগ, স্কুলে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে বসার ব্রেঞ্চ, ফলে আদি যুগের মত মেঝেতে বসেই পড়াশুনা করতে হয় তাদের। এছাড়া স্কুলের বাউন্ডারি না থাকায় বাইরের বখাটে যুবকরা গাড়ি বাইক নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে আর তাতে বেশ কয়েকবার ছাত্রদের দুর্ঘটনাও হয়েছে। কচিকাঁচা ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করে বলে যে, মিডডে মিলে তাদের তেমন ভালো খাওয়ানো হয়না। মিড ডে মিলের যে ডাইনিং হল রয়েছে তা নির্মাণের পর থেকে সর্বদাই বন্ধ অবস্থায় থাকে; ফলে রোদ বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের নিচেই খাবার খেতে হয় তাদের। পাশাপাশি রয়েছে পানীয় জলেরও সমস্যা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ সকল অভিযোগ নিয়ে সংবাদ মাধ্যম স্কুলে গেলে মিড ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মিলন কুমার মালাকার প্রথমবারের মতো এই ডাইনিং হলটি খুলে দেন ও ছাত্র-ছাত্রীরা ডাইনিং হলে বসে মিড ডে মিল খাওয়ার সুযোগ পায়।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, নবম শ্রেণি থেকে আজ পর্যন্ত ৪ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোন ধরনের স্টাইফেন পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। সে ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীরা প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে প্রধান শিক্ষক ছাত্রদেরকে ব্যাংকে একাউন্ট চেক করার কথা বলেন। ব্যাংকে ছাত্রছাত্রীরা তাদের অ্যাকাউন্ট চেক করলে স্টাইফেনের কোন টাকা একাউন্টে ঢুকে নি; তাই তারা দীর্ঘদিন থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে। এসকল বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তিনি ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে তিনি নজর দেবেন বলেন সংবাদমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেন। তবে তিনি স্কুলে ব্রেঞ্চের সমস্যা, বাউন্ডারির সমস্যা নিয়ে ডিস্ট্রিক এডুকেশন অফিসার রিপন চক্রবর্তী মহাশয়ের কাছে অনেকবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন কিন্তু উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বজেন্দ্র নগর স্কুলের দিকে নজর দিচ্ছে না বলেও প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য। প্রধান শিক্ষক আরও বললেন, উনার স্কুলে ২ জন ক্লার্ক রয়েছেন, যারা অনভিজ্ঞ থাকায় তাদের কাজটুকুও তাঁকে করতে হয় বলে জানান। তবে মিড ডে মিলের ডাইনিং হলের ব্যাপারটা নিয়ে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের অভিযোগ মানতে নারাজ।

বজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা কতটুকু ছাত্রদের পাঠ দান করে থাকেন তা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ল। ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! শিক্ষামন্ত্রীর নাম ওদের জানা নেই। জানেনা কোন জেলায় বাস করে। আর তাতে একপ্রকার পরিষ্কার হয়ে গেল যে শিক্ষক বাবুরা স্কুলে এসে স্টাফ রুম আর কেন্টিনে স্কুলের সময়টা কাটিয়ে দিন ক্লাসে না গিয়ে। অপরদিকে মিড ডে মিলের চালে পোকা ধরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মিড ডে মিলের ইনচার্জ শিক্ষক মিলন কুমার মালাকারের রেজিস্টারের রয়েছে ১১১২ কেজি চাল কিন্তু স্টোরে দেখা গেল ১৩০০ কেজির উপরে চাল। তাহলে কোথা থেকে আসলো এত চালের ফারাক। তাহলে কি খাতায় রেজিস্টারে চাল ব্যয়ের হিসাব ঠিকঠাক করে নিলেও স্টোর থেকে চাল ব্যয় করতে ভুলে গিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রশ্ন নানা মহলে। এখন ব্রজেন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে এলাকার স্থানীয় অভিভাবকরা জোরালো দাবি তুলেছেন যে, রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর যেন এই বিদ্যালয়ের দিকে একটু দৃষ্টি দেন। নতুবা নবপ্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি স্থানীয় অভিভাবক ও জনগণ রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছে।

আরও পড়ুন : বিভিন্ন দাবি নিয়ে কদমতলার উত্তর ফুলবাড়ি উচ্চ বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের কচিকাঁচা ছাত্রছাত্রীদের পথ অবরোধ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Close Menu