নর্থ ইস্ট এমপি ফোরামের সাংসদদের সাথে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. জীতেন্দ্র সিং


সবুজ ত্রিপুরা, সংবাদমাধ্যম, ২৮ জুন : ডোনার মন্ত্রী ড. জীতেন্দ্র সিং আজ উত্তর-পূর্ব থেকে নির্বাচিত সাংসদদের সংগঠন নর্থ ইস্ট এমপি ফোরামের সাথে বৈঠক করেছেন৷ এই বৈঠকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে আসা নতুন সাংসদ এবং রাজ্যসভার সাংসদরাও উপস্থিত ছিলেন৷ মূলতঃ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে বর্তমানে যে সমস্ত সরকারি প্রকল্প চালু রয়েছে এবং সরকারের ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে৷ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডোনারের সচিব ড. ইন্দ্রজিৎ সিং, নর্থ ইস্ট কাউন্সিলের সচিব শ্রী রাম মুইভা এবং মন্ত্রকের অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরাও৷
ডঃ জিতেন্দ্র সিং-এর সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাংসদদের বৈঠকের একাংশ।
সাংসদদের স্বাগত জানিয়ে ড. জীতেন্দ্র সিং বলেন, এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সাংসদদের সাথে নিবিড় সমন্বয় রেখে সাধারণ মানুষদের জীবনধারণের মানোন্নয়ন করবে৷ তিনি বলেন, একমাত্র ডোনার হলো সরকারের কোনো অঞ্চলভিত্তিক মন্ত্রক৷ তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সরকার এই অঞ্চলের উন্নয়নকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে৷ তিনি জানান, ডিপিআরের ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করা হয়েছে যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব না হয়৷ মন্ত্রী বলেন, সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী ও দিল্লিতে অবস্থানরত রেসিডেন্স কমিশনারদের অনুরোধ করা হয়েছে যাবতীয় প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে ডোনার মন্ত্রকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতে৷ তিনি আরও জানান যে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়েও অর্থ মন্ত্রকের সাথে আলোচনা চলছে৷ ড. সিং বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য এনএলসিপিআর ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রামে আগে ৯০ ঃ ১০ এর যে পদ্ধতি চালু ছিল, যেখানে ৯০ টাকা দেওয়া হতো কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এবং বাকি ১০ টাকা দিতে হতো রাজ্য সরকারকে, সেখানে নতুন করে এই রাজ্যগুলিকে আর ১০ শতাংশ টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না৷ এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকার নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট স্কীম (এনইএসআইডিএস)নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে৷ এই প্রকল্পে পুরো ১০০ শতাংশ টাকার দায়িত্বই নেবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এরফলে এই সমস্ত প্রকল্পের জন্য অর্থ সরবরাহ করতে রাজ্যগুলিকে যে সমস্যায় পড়তে হতো তা থেকে বড় নিস্তার পেতে চলেছে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি৷

মন্ত্রীসভা কর্তৃক অপর একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান ফরেস্ট(অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিনান্স, ২০১৭’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাঁশকে “গাছ” এর সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান যে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এনইসির পুনর্গঠিত হয়েছে যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে করা হয়েছে চেয়ারম্যান এবং ডোনার মন্ত্রী হবেন ভাইস চেয়ারম্যান৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগামী ৩-৪ আগষ্ট গুয়াহাটিতে এনইসি’র প্লেনারি সেশনে পৌরহিত্য করবেন বলেও সদস্যদের অবগত করেছেন তিনি৷
ডোনার মন্ত্রকের সচিব ড. ইন্দ্রজিৎ সিং মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা তুলে ধরেছেন কীভাবে মন্ত্রক উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি এবং সড়ক, অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক, পর্যটন, জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করে৷ এই অঞ্চলে রেল সমেত যে সমস্ত বড় প্রকল্পগুলি চালু রয়েছে সেগুলি সম্পর্কেও তিনি সবিস্তারে উল্লেখ করেন৷ এছাড়া, গত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি নিতি ফোরাম গঠন করা হয়েছে৷ গত ১০ এপ্রিল ২০১৮ ফোরামের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগরতলায়, যেখানে স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় বৈঠকটি হয়েছিল ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ গুয়াহাটিতে যেখানে উত্তর পূর্বের বাঁশ, চা, ডেয়ারি এবং পর্যটনের উন্নয়ন নিয়ে সুপারিশ গৃহিত হয়৷ উত্তর পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের জন্য এবং বিশেষ প্রকল্পের জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন৷
বৈঠকে উপস্থিত সাংসদদের এনইসি’র গঠন নিয়ে বিস্তারিত অবগত করানো হয়৷ বিশেষ করে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এনইসি’র বিভিন্ন প্রয়াসও তুলে ধরা হয়৷ এনইসি’র উদ্যোগে এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে ১০,৯১১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং এই রাজ্যগুলি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনাস নির্মাণ, বিমানবন্দরের পরিকাঠামোর উন্নয়ন, বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়ন সহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রকল্পে এনইসি’র ভুমিকা নিয়েও সদস্যদের অবগত করানো হয়৷
মতবিনিময়কালে সদস্যরা নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিষয়ও তুলে ধরেছেন৷ যে সমস্ত সদস্যরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন- তাপির গাও( ইস্ট সিয়াং, অরুণাচল প্রদেশ), শ্রী কিরেন রিজিজু (ওয়েস্ট কামেং, অরুণাচল প্রদেশ), শ্রী আব্দুল খালেক (বরপেটা, অসম), শ্রী রামেশ্বর তেলি (ডিব্রুগড়, অসম), শ্রী দিলীপ সইকিয়া, (মঙ্গলদৈই, অসম), শ্রী গৌরব গগৈ(কালিবর, অসম), শ্রী হরেন সিং বে(অটোনমাস ডিস্টি্ক্টস, অসম), শ্রী তপন কুমার গগৈ (জোরহাট, অসম), শ্রী নবকুমার সরনিয়া (কোকড়াঝড়< অসম), শ্রী কৃপানাথ মোল্লা (করিবমগঞ্জ, অসম), শ্রী পল্লব লোচন দাস(তেজপুর, অসম), শ্রীমতি ক্যুইন ওজা (গুয়াহাটি, অসম), শ্রী রাজদীপ রায়(শিলচর, অসম), শ্রী লরহো এস ফোজে (আউটার মণিপুর), ড. রাজকুমার রঞ্জন সিং (ইনার মণিপুর), শ্রী ভিনসেন্ট পালা, (শিলং, মেঘালয়), মিস আগাথা সাংমা, (তোরা, মেঘালয়), সি লালরোসাঙ্গা, (মিজোরাম), শ্রী তোকেহো ইয়েপথোমি (নাগাল্যান্ড), শ্রী ইন্দ্র হাং (সিকিম), শ্রীমতি প্রতিমা ভৌমিক (ওয়েস্ট ত্রিপুরা), শ্রী রেবতী ত্রিপুরা (ইস্ট ত্রিপুরা)৷

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজ্যসভার সদস্যরা ছিলেন- শ্রী মুকুট মিথি (অরুণাচল প্রদেশ), শ্রী ভূবনেশ্বর কলিতা (অসম), শ্রী বীরেন্দ্র প্রসাদ বৈশ্য (অসম), শ্রী রিপুন বোরা (অসম), শ্রীমতি রনি নারা (অসম), শ্রী কামাখ্যা তাশা (অসম), শ্রী বিশ্বজিৎ ডাইমারি (অসম), শ্রীমতি ওয়াংসুক সাইয়েম (মেঘালয়), শ্রী রোনাল্ড সাপা ত্লাও (মিজোরাম), শ্রী কে জি কেনিয়ে (নাগাল্যান্ড), শ্রী হিসে লাচুংপা ( সিকিম), শ্রীমতি ঝর্ণা দাস বৈদ্য (ত্রিপুরা), শ্রী কে ভবনানন্দ সিং ( মণিপুর)৷



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Close Menu